Wednesday, May 21, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যসিঙ্গা লাগাই, দাঁতের পোক ফালাই:বেদে ও মানতাদের ঠিকানাহীন জীবন

সিঙ্গা লাগাই, দাঁতের পোক ফালাই:বেদে ও মানতাদের ঠিকানাহীন জীবন

দিদি সালাম বারেং বার… আমার নামটি জোসনা ভানু দিদি থাকি পদ্মার পার। আমরা এক ঘাটেতে রান্দি বারি, আরেক ঘাটে খাই.. মোদের সুখের সীমা নাই।  চির চেনা এই গানের সুর বেদেদের মুখে এখন আর শোনা যায়না। অথবা সিঙ্গা লাগাই, দাঁতের পোক ফালাই.. বেদেনীর জোরালো এই আবেদন এখন আর কারো মনে সাঁড়া দেয় না। তাই আসহায় হয়ে পরেছেন এই সম্প্রদায়ের লোকজন।

মানতাদেরও একই অবস্থায়। নদীর ঘাটে তাদের কাছে এখন আর কেউ মাছ কিনতে যায়না। বেদেরা স্থলে আর মানতাদের নদীর জলে সংসার হলেও দুঃখ যেন তাদের পিঁছু ছাড়ছেনা। তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে আগেরমত তারা এখন আর ভাল নেই।  নিজ ভূখন্ডে বাস করেও তারা যেন পরবাসী। 

দক্ষিণের জনপথ বাউফলে  আমন ধান কাটা মৌসুমে এই সম্প্রদায়ের লোকজন আগমন করেন। বিষধর সাপ নিয়ে খেলা, বিষাক্ত জীবন নিয়েই তাদের বসবাস। এক সময় নৌকা নিয়ে নৌ-পথে চলাচল করতো বেদে সম্প্রদায় । এখন নৌ-পথে বাধ  নির্মাণের ফলে নৌকা নিয়ে চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। শীত শুরু হলে এসব অঞ্চলে ধান কাঁটার ধুম লেগে যায়। কৃষি নির্ভর পরিবার গুলোয় আসে স্বচ্ছলতা। কর্মব্যাস্ত সময়ে কৃষক-কৃষাণীর শীর্ণ দেহের কোমর-পায়ের গোড়ালীতে বাত নামক ব্যাথা শুরু হয়। আর্থিক স্বচ্ছলতা, রোগ-বালাই তাড়ানোসহ বিভিন্ন সুবিধার সমাহার নিয়ে বেদেরাও চলে আসে পথ থেকে প্রান্তরের জনগুরুত্বপুর্ণ হাট-বাজারের সংলগ্নে।  

ছোট-ছোট ঝুপড়ি ঘর তুলে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে। সাপ খেলার পাশাপাশি বেদেনীরা তাবিজ-কবজ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় গাঁয়ের মেঠো পথে। তবে দিন দিন এ বেদে স¤প্রদায় সাপ ধরার নেশা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নানা পন্য এখন তাদের হাতে উঠেছে। বেঁচে থাকার নিরন্তন সংগ্রামেই আজ তাদের ভিন্ন পথে চলা । তার পরও যারা এ পেশাকে আগলে রেখেছে তাদের জীবন চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। বাউফলের কালাইয়া ইউপির বাজে সন্দিপ গ্রামের তুলাতলা খালে শতাধিক নৌকায় প্রায় ৬শ’ মানতা লোকের বাস। জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে নেই কোন ধারনা। আর থাকবেইবা কি করে? ওরাতো নদীর জলে বসবাস করে, মাছ ধরে বিক্রি করে, চাল, ডাল কিনে খায়। পুঁজি যোগানোসহ এ সম্প্রদায়ের  মানুষের সাহায্য-সহায়তায় নেই সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ।

 এরা সব ধরনের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এদের ভোটের রাজনীতি নেই। কে জিতল আর কে হাড়ল সে খবর তারা রাখে না ওরা। মানতা সম্প্রদায়  মূলত বরশি ও ছোট ছোট জাল দিয়ে মাছ ধরে। পেটের ক্ষুধা মিটিয়ে সঞ্চিত অর্থের ওপর বরশি, জাল কেনা আর নৌকা মেরামত নির্ভর করে। শিক্ষা কি, এরা জানেনা। ভোটাধিকার নেই এদের। এরকম সমাজ সভ্যতার অনেক কিছুই অজানা এই মানুষেরা নদীর কয়েক ফুট উচু ঢেউ কিংবা প্রকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে শক্ত হাতে নৌকা চালাতে পারে, নদী আর সাগর জলের আচর-আচরন এদের নখদর্পণে। জলের মতি-গতির সাথে সখ্যতা এদের জন্মাধিকার। এরা দল বেঁধে বহর নিয়ে বঙ্গোপসাগরের গভীর থেকে শুরু করে সুন্দরবন এবং হাতিয়া, সন্দীদ্বীপ, টেকনাফ পর্যন্ত মাছ ধরতে ঘুরে বেড়ায়। 

জনমানবহীন দ্বীপাঞ্চল সোনারচর, রুপারচর, জাহাজমারা, শীলেরচর, চর পাতিলায় এদের অনেক সময় দেখা যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় এদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এরা প্রধানত পোয়া, রামছোস (তাপসী), ট্যাংরা, গলসা, পাঙ্গাশ, কাওন প্রভৃতি মাছ ধরে। মইয়া জাল দিয়ে চিংড়ি মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। এ সম্প্রদায়  প্রতিটি নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর মাছ ধরায় পারদর্শী। এতসব অবদানের পরেও মানতা সম্পদায় আমাদের সমাজের অর্ন্তভূক্ত নয়। নানা সমস্যা-সংকট এদের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। এরা ভূখন্ডের কয়েশ বছরের পুড়ানো বাসিন্দা হলেও এদের নেই কোন প্রকার নাগরিক অধিকার

নেহাত কঁচুড়িপানা কিংবা নদীর জলে ভেসে যওয়া খড় কুটোর মতোই মানতারা আজীবন নদীর পানিতে ভেঁসে বেড়ায়। নাগরিক পরিচয় সংকট এদের প্রবল। এ সম্প্রদায়েরর নাম স্বাক্ষর করতে পারে এ ধরণের মানুষের সংখ্যা খুবই কম। শিশুদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় এবং 

ভূমি সমস্যায়  এ সম্প্রদায়ের  মানুষের মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে। এ স¤প্রদায়ের মানুষের মৃত্যু হলে আগে যেমন, কলা গাছের ভেলায় লাশ ভাসিয়ে দেয়া হত। এখন আর লাশ ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হয়না। নদীর পাড়ে বা কোন পরিত্যাক্ত ভিটের জমিতে কবর দেয়া হয়। 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments